ঢাকা২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তিন যুগ বাবা মায়ের দায়িত্ব নেননি ছেলে মেয়ে, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও 

প্রতিবেদক
admin
জুলাই ১৬, ২০২৪ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

সন্তান যে দায়িত্ব পালন করেননি,সেই দায়িত্ব পালন করলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসফিকুল আলম হালিম। নিজ সন্তান দায়িত্ব না নেওয়ায় প্রায় তিন যুগ ধরে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছিল এক দম্পতির। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের আক্তারাম এলাকার জয়নালের বাড়িতেই দিন কাটছিলো তার। সেখানেই খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করতেন তারা। বিষয়টি সদর ইউএনও নজরে আসলে তার দায়িত্ব নেয় উপজেলা প্রশাসন। অসহায় এই বৃদ্ধের নাম জামুরুদ্দিন (৮০)। জামুরুদ্দিনের সংসার জীবনে এক ছেলে এক মেয়ে থাকলেও বাবার দায়িত্ব নেয়নি কেউ।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে অসহায় পরিবারটিকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি থাকার জন্য ঘর, বাথরুম ও টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে। 

এর আগেও চরাঞ্চলে স্কুল প্রতিষ্ঠা, মাল টানা ঘোড়ার উপরে অমানবিক নির্যাতন, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ার উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা মানবিক কাজ করায় প্রশংসা করছেন স্থানীয়রা।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ব্রহ্মপুত্র নদের কালির আলগা চরে নির্মাণ করেছেন ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যা নিকেতন’ স্কুল। চরাঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা হিসেবে কৃষি ও গবাদি পশু লালন-পালনের গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। প্রচন্ড গরমের সময় ঠিকমতো সেচ না দেয়ার কারণে কমে যায় অনেক ফসলের আবাদ। বিষয়টি সমাধান করতে সার্বক্ষণিক সেচের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেন। এছাড়া চরাঞ্চলের মানুষের দু:খ-দুর্দশা দূরীকরণে ভিঢ়’র (WFP) সহযোগিতায় প্রায় ১.৫ কোটি টাকার অধিক খরচে বিভিন্ন চরে ভিটে উচুঁকরণসহ  শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রকল্প নেয়ার ব্যবস্থা করেন। 

কালির আলগা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমগো এইহানে স্কুল আছিল না। মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিতে হইতো। অহন উপজেলা থাইকা স্কুল কইরা দিছে। বাচ্চাগো নিয়া চিন্তা দূর হইছে। তারা সুন্দর পড়তে পারতাছে, খেলতে পারতাছে। চরে স্কুল খুব জরুরি ছিল।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন,  সদরের যাত্রাপুর ও হলোখানা ইউনিয়নে প্রায় ২৫০টি ঘোড়ার গাড়ির চালক রয়েছেন। এসব চালকরা তাদের পালিত ঘোড়ার মাধ্যমে জীবন-জীবিকা করে থাকেন। কিন্তু ঘোড়াগুলোকে ঠিক মতো যত্ন নিতেন না মালিকরা। 

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি ভীষণভাবে নাড়া দেয় ইউএনও মো: মুসফিকুল হালিমকে। উপজেলায় যোগদানের কিছু দিন পরেই গাড়ির চালকদের জন্য ‘ঘোড়া লালন-পালন সংক্রান্ত, খাদ্যাভ্যাস, রোগবালাই ও নিষ্ঠুরতা পরিহার’ বিষয়ে কাজ করেন। সচেতনতা তৈরি করে  অবলা প্রাণি ঘোড়া যাতে কষ্ট না পায় সে জন্য ঘোড়ার ঘাড়ে লোহার শেফটের উপর ফোম ও চামড়া দিয়ে সেলাই করে দেয়ার ব্যতিক্রম উদ্যোগ নেন। একই সঙ্গে ঘোড়া ও মালিকদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

(ইউএনও) মো: মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘বন্যা ও প্রাকৃতিক নানা প্রতিকূলতায় চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকেন। নদীর প্রবাহে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য চরের শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। 

তিনি বলেন, এ ছাড়াও চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বদলিজনিত কারণে আমি চলে গেলেও আমার পরবর্তী দায়িত্বশীলরা এসব কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল একদিন সারা দেশের জন্য মডেল হবে বলে বিশ্বাস করি।’

গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে এ জেলার সদর উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিষ্ঠার সাথে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি এখানকার মাটি ও মানুষের মধ্যে মিশে গেছেন নিবিরভাবেই। মাত্র সাত মাস দায়িত্ব পালনে বদলে দিয়েছেন অনেক কিছুই। এর মধ্যে বেজেছে বিদায়ী ঘন্টা। বিপিএটিসি রেক্টর (সচিব) এর পিএস হিসেবে তিনি বদলি হয়েছেন।